Wellcome to National Portal
Main Comtent Skiped

Title
Use vaccines made by the Department of Livestock to prevent various infectious diseases in cattle
Details

বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে একটি ছোট্ট কৃষি প্রধান দেশ যার প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করে প্রায় ১০০০ জন মানুষ যা কিনা বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বহুগুণে বেশি। তাই বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে জনসংখ্যার দিক থেকে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। এই বিপুল জনগোষ্ঠির সুষ্ঠু জীবন যাপনের জন্য এ দেশের প্রায় ২৩.৫  মিলিয়ন গরু, ১ মিলিয়ন মহিষ, ৩৪ মিলিয়ন ছাগল ও ৩ মিলিয়ন ভেড়া প্রাণিজ আমিষ যেমন- দুধ, মাংসের চাহিদা পূরণ, কৃষি কাজ, হাল চাষ, চামড়া রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, গ্রামীণ পরিবহনে গাড়ী টানা, জ্বালানী ও মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধির জন্য গোবর, ধর্মীয় সন্তুষ্টিতে পশু কোরবানী, কর্ম-সংস্থানসহ দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থ উর্পাজন, এবং পরিবেশ রক্ষাসহ ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। গবাদিপশু আর অবহেলিত সম্পদ নয় বরং এটি  খামারীর নিকট একটি অতি মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গবাদিপশুর গুরুত্ব অনুধাবন করেই এদেশের গ্রামীণ এলাকায় প্রায় ৭৫ ভাগের বেশি লোক কোনো না কোনো পশু-পাখি পালন করে থাকেন। তবে,  গবাদিপশু প্রতিপালনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রধান সমস্যা হচ্ছে রোগ। গবাদিপশুকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে মুক্ত রাখতে হলে বেশ কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা প্রয়োজন তার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পরিমাণমত সুষম খাবার সরবরাহ করা এবং কৃমি দমন ব্যবস্থা উল্লে­খযোগ্য। উল্লি­খিত ব্যবস্থাগুলো সুষ্ঠুভাবে সুসম্পন্ন করার পাশাপাশি যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে প্রতিপালিত পশুকে নিয়মিত ভ্যাকসিন বা টিকাদানের আওতায় নিয়ে আসা। গবাদিপশুর বিভিন্ন রোগের মধ্যে কয়েকটি রোগ সংক্রামক বা ছোঁয়াচে। এ সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগগুলোতে গবাদিপশু আক্রান্ত হলে অনেকক্ষেত্রে চিকিৎসার কোনো সুযোগ বা সময় পাওয়া যায় না। চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়ার আগেই পশু মারা যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে অনেক অর্থ ব্যয় করে দ্রুত চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়ে গবাদিপশুকে বাঁচিয়ে রাখা হলেও তা থেকে প্রত্যাশিত উৎপাদন পাওয়া যায় না। কাজেই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা হচ্ছে এই রোগগুলো যেন গবাদিপশুকে আক্রমণ করতে না পারে, তার জন্য এসব সংক্রামক রোগসমূহ প্রতিরোধকল্পে ভ্যাকসিন বা টিকা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া। বাংলাদেশের গবাদিপশুর ক্ষেত্রে ৮টি সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায় এবং এই রোগগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য টিকাও এ দেশে পাওয়া যায়। এ দেশে প্রাপ্ত টিকাগুলো হচ্ছে; ১. তড়কা, ২. গলাফুলা, ৩.বাদলা,  ৪. ক্ষুরা রোগ, ৫. জলাতঙ্ক বা র‌্যাবিস,  ৬. ছাগলের বসন্ত ও ৭। ছাগলের পিপিআর রোগের টিকা।
এসব টিকা প্রাণিসম্পদ গবেষণাগার, মহাখালী, ঢাকা ও কুমিল্লাস্থ টিকা উৎপাদন কেন্দ্রে প্রস্তুত করে সারা দেশে প্রাণী চিকিৎসালয়ের মাধ্যমে প্রদান করা হয়ে থাকে। টিকা প্রদান করলেই নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয় না। তাই টিকা ব্যবহারের পূর্বে অনেক কিছু জানা প্রয়োজন। 

 

নিম্নে ভ্যাকসিন বা টিকা নিয়ে আলোচনা করা হল: 
 

ভ্যাকসিন / টিকা কী?
ভ্যাকসিন বা টিকা একটি জৈবিক প্রোডাক্ট। নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত প্রাণীর দেহ হতে উক্ত জীবাণু সংগ্রহ করে বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়। পরে ওই জীবাণুকে নিস্তেজ বা অর্ধমৃত বা মৃত অবস্থায় এনে এক ধরনের জীবাণুজাত ওষুধ তৈরি করা হয় যা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে দেহে প্রবেশ করালে উক্ত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস জাতীয় রোগের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে, যাকে ভ্যাকসিন বা টিকা বলে। 


কোল্ড চেইন (Cold chain)
কোন্ড চেইন বলতে এমন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়াকে বোঝায় যেখানে ভ্যাকসিন তৈরি হওয়ার পর থেকে তার গুণাবলী অক্ষুণœ রাখার জন্য ব্যবহারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত  নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণের মাধ্যমে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ধরে রাখা এবং এই কার্যকারিতা ধরে রাখতে সব সময়ই যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়। ভ্যাকসিন তাপের প্রতি সংবেদনশীল এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকের নির্দেশাবলী কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রাতেই সংরক্ষণ করতে হবে। অপর কথায় বলা যায় কোনো ধরনের বিরতি ছাড়াই সব সময় অনুকূল পরিবেশে ভ্যাকসিন পরিবহন করতে হয়। কোল্ড চেইন বজায় রাখার জন্য যে সব উপাদানের প্রয়োজন হয় তা হলো- কোল্ড রুম, ফ্রিজার রুম, রিফ্রিজারেটর, ডীপ ফ্রিজার, রিফ্রিজারেটেড ট্রান্সপোর্ট, কোল্ড বক্স, ভ্যাকসিন ক্যারিয়ার, আইসপ্যাক, থার্মোমিটার, ইত্যাদি। 


টিকাবীজ সংরক্ষণ ও পরিবহন
টিকা বা ভ্যাকসিন সংরক্ষণ: টিকা বা ভ্যাকসিন সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি বোতলের গায়ে বা আলাদা কাগজে লেখা থাকে। যে সব টিকা হিমশুষ্ক অবস্থায় ভায়াল বা এম্পুলে থাকে, যেমন- পি.পি.আর, ছাগলের বসন্ত ও জলাতঙ্কের টিকা শূন্য ডিগ্রী তাপমাত্রার নীচে সংরক্ষণ করতে হয়। তাই এসব টিকা ডীপ ফ্রিজে রাখতে হয়। তড়কা, গলাফুলা, বাদলা, ক্ষুরা রোগের টিকা ৪-৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অর্থাৎ রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করতে হয়। সঠিক পদ্ধতিতে বা তাপমাত্রায় টিকা সংরক্ষণ না করলে টিকার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এসব টিকা ব্যবহার করলেও সঠিক ফল না হয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হতে বোতল বা ভায়ালের গায়ে লেখা সংরক্ষণের নিয়মাবলী সঠিকভাবে মেনে চলতে হয়। টিকা ব্যবহারের সময়সীমা উত্তীর্ণ হয়ে গেলে সে টিকা ব্যবহার করা উচিত নয়। 
 

টিকা বা ভ্যাকসিন পরিবহন : টিকা বা ভ্যাকসিন ব্যবহারের পূর্ব পর্যন্ত টিকার গুণগত মান ঠিক রেখে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য সঠিকভাবে পরিবহন করতে হয়। প্রথমে টিকা উৎপাদন প্রতিষ্ঠান হতে টিকা শীতল অর্থাৎ রেফ্রিজারেটেড ভ্যানে (Refregerated and/cool van) করে বা বড় আইস বক্সে বরফ দিয়ে তার মধ্যে টিকা নিয়ে বিভিন্ন স্থান যেমন-জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর, প্রাণী হাসপাতাল বা উপজেলায় আনতে হয়। তারপর উক্ত টিকা রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করতে হয়। সেখান থেকে আবার ছোট ছোট থার্মোস ফ্লাক্সে বরফ দিয়ে তার পর বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। টিকা প্রয়োগের পূর্ব পর্যন্ত টিকার শীতলতা বজায় রাখতে হবে। অন্যথায় টিকার গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাবে। 
টিকার ব্যবহার পদ্ধতি 
টিকা সংগ্রহকালে টিকা উৎপাদন কেন্দ্র থেকে এদের ব্যবহারবিধি জেনে নিতে হবে। এ ছাড়া বোতলের গায়েও ব্যবহারবিধি লেখা থাকে।  টিকা গবাদিপশুকে দেয়ার পূর্বে টিকাদানকারী টিকাদানের সরঞ্জামাদি যেমন- সিরিঞ্জ, সূঁচ, টিকা মেশানোর পাত্র, পরিশ্রুত পানি, ফোটানো পানি, ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। নিম্নে টিকার নাম, রোগের নাম, প্রদানের স্থান (চিত্র-১), মাত্রা, ইমিউনিটি,  ইত্যাদি একটি ছকে দেখানো হলো (টেবিল-১)।
 

টেবিল-১: গবাদিপশুর জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ভ্যাকসিন/ টিকার নাম ও ব্যবহার বিধি।

টিকার নাম ব্যবহারবিধি
১। তড়কা রোগের টিকা (Anthrax Vaccine) তড়কা টিকা ১০০ মিলি বোতলে তরল অবস্থায় থাকে। পশুর ৬ মাস বয়সে প্রথম টিকা দিতে হয়। গরু ও মহিষের জন্য টিকার মাত্রা হল ১ মিলি. এবং ছাগল ও ভেড়ার জন্য ০.৫ মিলি। ১ বছর অন্তর এ টিকা দিতে হয়। এ টিকা পশুর ঘাড়ের/গলার  চামড়ার নিচে দিতে হয়। তবে ৭ মাসের ঊর্দ্ধ বয়সের গর্ভবতী গরু/মহিষকে দেয়া যাবে না। ছাগল/ভেড়ার ক্ষেত্রে গর্ভধারণের ৩ মাস পরে  দেয়া যাবে না ।
২। গলাফুলা রেগের টিকা (Haemorrahagic Septicemia vaccine) গলাফুলা টিকা ১০০ মিলি তরল অবস্থায় বোতলে থাকে। পশুর ৬ মাস বয়সে প্রথম টিকা দিতে হয়। গরু ও মহিষের জন্য টিকার মাত্রা হল ২ মিলি. এবং ছাগল ও ভেড়ার জন্য ১ মিলি।  প্রতি ৬ মাস অন্তর টিকা দিতে হয়। এ টিকাও  পশুর ঘাড়ের চামড়ার নিচে দিতে হয়।
৩। বাদলা রোগের টিকা (Black Quarter Vaccine) বাদলা রোগের টিকা ১০০ মিলি তরল অবস্থায় বোতলে থাকে। পশুর ৬ মাস বয়সে প্রথম টিকা দিতে হয়। গরু ও মহিষের জন্য মাত্রা হল ৫ মিলি এবং ছাগল ও ভেড়ার জন্য ২ মিলি। প্রতি ৬ মাস অন্তর টিকা দিতে হয়। এ টিকা পশুর ঘাড়ের চামড়ার নিচে দিতে হয়। তবে এ রোগের টিকা   ২.৫-৩ বছর পরে আর গরু/ মহিষকে দেয়ার প্রয়োজন হয় না ।
৪। ক্ষুরা রোগের টিকা (Foot & Mouth Disease Vaccine) ক্ষুরা রোগের টিকা বোতলে তরল অবস্থায় থাকে। পশুর ৪ মাস বয়সে প্রথম টিকা দিতে হয়। এ রোগের বিভিন্ন স্ট্রেইনের জন্য বিভিন্ন ভ্যাকসিন পাওয়া যায় যেমন- মনোভ্যালেন্ট, বাইভ্যালেন্ট ও ট্রাইভ্যালেন্ট, ইত্যাদি। গরু ও মহিষের জন্য ভ্যাকসিনের মাত্রা মনো হলে ৩, বাই হলে ৬ এবং ট্রাই হলে ৯ মিলি এবং ছাগল ও ভেড়ার জন্য গরুর অর্ধেক ডোজ দিতে হয়। প্রতি ৪ মাস অন্তর টিকা দিতে হয়। এ টিকা পশুর ঘাড়ের চামড়ার নিচে দিতে হয়। উল্লেখ্য, গর্ভবতী পশুকেও এ টিকা দেয়া যায়।
৫। জলাতঙ্ক রোগের টিকা (Rabies Vaccine) জলাতঙ্কের জন্য দুই ধরনের টিকা পাওয়া যায়, যথা: HEP and LEP। জলাতঙ্ক রোগের টিকা ভায়ালে বা এম্পুলে হিমশুষ্ক অবস্থায় থাকে। ভায়ালের টিকা     ৩ মিলি বিশুদ্ধ (Distilled water) পানিতে মিশিয়ে সম্পূর্ণ টিকা মাংসপেশীতে ইনজেকশন করতে হয়।     উল্লে­খ্য HEP (GBP Bwc) টিকা বিশুদ্ধ পানিতে মিশিয়ে  ১.৫ মিলি পরিমাণ গরু ও মহিষের ৬ মাস বয়সে মাংসপেশীতে ইনজেকশন করতে হয়। LEP (GI Bwc) কুকুরের ৩ মাস বয়সে প্রথম এবং প্রতি বছর একই নিয়মে এ টিকা (৩.০ মিলি) দিতে হয়। এছাড়াও পশুকে কুকুরে কামড়ানোর পরে পোস্ট এক্সপোসার ভ্যাকসিন এআরভি (Anti Rabies vaccine/ ARV) দিতে হয়। বেসরকারি ওষুধ কোম্পানির র‌্যাবিসিন (Rabisin) ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। মাত্রা হলো- ১ম দিন ৪ মিলি  ৪ স্থানে   ১ মিলি করে, ৭ম দিনে ৩ মিলি ৩ স্থানে ১ মিলি করে এবং ২১তম দিনে  ৩ স্থানে ১ মিলি করে ৩ মিলি মাংসে দিতে হয় ।
৬। ছাগলের বসন্তের টিকা (Goat pox vaccine)  ছাগলের বসন্তের টিকা ভায়ালে হিমায়িত অবস্থায় থাকে। ভায়ালের সাথে বিশুদ্ধ পানি থাকে। পানিতে এ টিকা গুলে ২ মিলি প্রতি ছাগলের লেজের গোড়াতে ত্বকের নিচে ইনজেকশন করতে হয়। ছাগলের ৫ মাস বয়সে প্রথম এ টিকা দিতে হয়।
৭। ছাগলের পিপিআর টিকা (PPR Vaccine) ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন ভায়ালে হিমায়িত অবস্থায় থাকে। ভায়ালের সাথে ১০০মিলি ডাইলুয়েন্ট থাকে। এ টিকা সরবরাহকৃত ডাইলুয়েন্টের ভেতর ভালো করে মিশিয়ে  প্রতিটি ছাগলকে ঘাড়ের চামড়ার নীচে ১ মিলি ইনজেকশন করে দিতে হয়। ছাগলের ৩ মাস বয়সে প্রথম এ টিকা দিতে হয়। এ টিকা এক বছর অন্তর দিতে হয়। উল্লে­খ্য, গর্ভবতী ছাগলকেও এ টিকা দেওয়া যায় ।

ভ্যাকসিন/টিকা প্রদানকারী করণীয়
ভ্যাকসিন বা টিকা দেয়ার উদ্দেশ্য হলো পশুপাখিকে রোগের হাত হতে রক্ষা করা কিন্ত অনেক সময় ভ্যাকসিন দিয়ে রোগের প্রকোপ কমানো যায় না এমনকি রোগ প্রতিরোধ তৈরির পূর্বে অনেক পশুপাখি দুর্ঘটনায় পড়ে। ভ্যাকসিন দেয়ার পর পরই প্রচন্ড ব্যথা হওয়া, লালা ঝরা, অস্থিরতাসহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় এমনকি পশু সংগে সংগে/কয়েক ঘন্টার মধ্যে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। আবার অনেক সময় ভ্যকাসিনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে টিকা প্রদানের জায়গার মাংসপেশী অনেক ফুলে যায় অথবা ফোঁড়া হয়। এমনকি দুধ শুকিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এসব দুর্ঘটনা এড়াতে হলে ভ্যাকসিন প্রদানকারীকে অবশ্যই নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ মেনে চলতে হবে। 
(১)    টিকা বা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার মেয়াদকাল দেখে নিতে হবে অর্থাৎ ভ্যাকসিনের মেয়াদ উর্ত্তীণের তারিখ নিশ্চিত হতে হবে।
(২)    ব্যবহারের পূর্ব পর্যন্ত ভ্যাকসিন কুল বক্স বা ফ্লাক্সে রাখতে হবে। 
(৩)    ব্যবহারের পূর্বে বোতল ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে যাতে টিকা সমভাবে মিশে যায়।
(৪)    ভ্যাকসিন সাধারণত ভোরে দেয়া উত্তম।
(৫)    সরাসরি সূর্য কিরণ থেকে টিকার বোতল দূরে রাখতে হবে।
(৬)    সব গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া একত্র করে ভ্যাকসিন দিতে হবে।
(৭)    বোতল খোলার ২ ঘন্টার মধ্যে ভ্যাকসিন প্রদান শেষ করা উত্তম।
(৮)    ভ্যাকসিন কোনো ছায়াযুক্ত বা গাছের নীচে ব্যবহার করতে হবে।
(৯)    যে কোনো ভ্যাকসিন প্রথমে একটি  পশুকে দিয়ে ১৫-২০ মিনিট লক্ষ্য করতে হবে কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হয় কিনা যদি না হয় তবে নিশ্চিন্তে বাকী পশুদেরকে দেয়া যায়।
(১০)    যে সব টিকা চামড়ার নীচে দিতে হয় তা যেন কোনো অবস্থায় মাংসপেশীতে না যায়। 
(১১)    টিকা কেবল সুস্থ সবল পশুকে দেওয়া উচিত।
(১২)    দুর্বল পশু ও ৪ মাসের নীচের পশুকে  ভ্যাকসিন দেয়া ঠিক নয়।    
 

ভ্যাকসিন বা টিকা ফলপ্রসূ না হওয়ার কারণসমূহ 
যেসব কারণে গবাদিপশুকে ভ্যাকসিন বা টিকা দেয়ার পরও রোগ প্রতিরোধ হয় না তা নীচে বর্ণিত হলো। 
১.    পশুপাখির যে রোগের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে যদি ওই রোগের জীবাণু পূর্বেই পশুপাখির শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকে তবে ওই ভ্যাকসিন কার্যকর হবে না বরং আরো দ্রুত রোগ দেখা দিবে।। এজন্য কোনো পশুপাখির খামার/ ঝাঁকে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার পর ওই খামার/ঝাঁকে কোনো সময়ই ওই রোগের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন দেয়া উচিত নয় । 
২.    ভ্যাকসিনের গুণগতমান সঠিক না থাকলে অর্থাৎ নিম্নমানের হলে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেও কাজ হয় না। সাধারণত রোগজীবাণুর স্ট্রেইন, টাইপ এবং ভ্যাকসিনের স্ট্রেইন, টাইপ এক হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার পরও পশুপাখি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। 
৩.    ভ্যাকসিন ঠিকমতো বা পরিমাণমতো শরীরে প্রবেশ না করলে ভ্যাকসিন ফলপ্রসূ হয় না ।  
৪.    সুষ্ঠু পরিবেশ তথা যথাযথ তাপমাত্রায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণ না করলে ওই ভ্যাকসিন দেয়ার পরও রোগ দেখা দিতে পারে। 
৫.    জীবিত জীবাণু দিয়ে তৈরি ভ্যাকসিনের জীবাণুগুলো মৃত হলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে। 
৬.    ভ্যাকসিন দেয়ার যন্ত্রপাতি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত না হলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে। 
৭.    খাবার পানির মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেয়ার সময় ক্লোরিনযুক্ত পানি ব্যবহার করা হলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। 
৮.    ভ্যাকসিন পানির সাথে মিশানোর পর সাথে সাথে ব্যবহার করতে হবে এবং তা সংরক্ষণ করা যাবে না। 
৯.    ভ্যাকসিন ব্যবহারের সময় ভ্যাকসিন ফ্রিজ থেকে বের করার পর ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় আনার পর প্রয়োগ করতে হয়। প্রয়োগের পূর্বে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হয়। বোতল খোলার পর গ্রীষ্মকালে ৪ ঘন্টা ও শীতকালে ৮ ঘন্টার মধ্যে ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে হয়। অন্যথায় ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ব্যাহত হতে পারে। 
১০.    যে ভ্যাকসিনের ব্যবহারের তারিখ শেষ হয়ে গেছে ওই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে কোনো ফল পাওয়া যাবে না। 
১১.    অসুস্থ ও দুর্বল পশুকে ভ্যাকসিন দিলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় না। 

Images
Attachments
Publish Date
24/10/2021
Archieve Date
24/10/2024